সেচের প্রয়োজনীয়তা
আমরা জানি জমিতে পানির ঘাটতি হলে সেচ না দিলে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। কিন্তু এই সেচের পানিরও অপচয় হয়। সেচের পানির উৎস ভূনিম্নস্থ হোক অথবা ভূউপরিস্থ হোক, সবই কোনো না কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়। এতে কৃষকের শ্রমের ব্যয় হয় এবং অর্থেরও ব্যয় হয়। তাই কোনোভাবেই সেচের পানির অপব্যয় বা অপচয় যাতে না হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অর্থাৎ সেচের পানির অপচয় রোধ করার মাধ্যমে এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা যায়।
বিভিন্নভাবে সেচের পানির অপচয় হয়। কীভাবে সেচের পানির অপচয় হয় তা নিচে উল্লেখ করা হলো-
১। বাষ্পীভবন
২। পানির অনুস্রবণ
৩। পানি চুয়ানো
বাষ্পীভবন: সূর্যের তাপে প্রতিনিয়ত খাল-বিল, নদী-নালা থেকে যেমন পানি বাষ্পীভূত হচ্ছে তেমনি ফসলের জমির সেচের পানিও বাষ্পীভূত হচ্ছে। পানির এই বাষ্পীভবন রোধ করা কঠিন ব্যাপার। তবে সময়মতো এবং পরিমাণমতো পানি সেচ দিতে হবে যাতে ফসল নিজ প্রয়োজনে পানি গ্রহণ করতে পারে।
পানির অনুস্রবণ: সেচের পানি মাটির স্তর ভেদ করে সোজাসুজি নিচের দিকে চলে যাওয়াকে পানির অনুস্রবণ বলা হয়। অনুস্রবণের মাধ্যমে সেচের পানির অনেক অপচয় হয়। সেচের নালায় বা জমিতে শক্ত স্তর না থাকলে সহজেই পানির অনুস্রবণ ঘটে। অতএব, নালা বা জমিতে শক্ত সতর সৃষ্টি করে পানির অনুস্রবণ রোধ করা যায়।
পানি চুয়ানো: পানি চুয়ানো পানির অনুস্রবণের অনুরূপ। শুধু পার্থক্য হলো অনুস্রবণের মাধ্যমে পানি নিচে চলে যায়। আর চুয়ানোর মাধ্যমে পানি অন্য ক্ষেতে চলে যায়। অনেক ইঁদুর আইলের এপাশ-ওপাশ গর্ত করে। ইঁদুরের গর্তের মাধ্যমেও পানি চুইয়ে অন্যত্র চলে যায়। অতএব, শক্ত মাটি দ্বারা এমনভাবে ক্ষেতের আইল ও নালা করতে হবে যেন পানি চুইয়ে না যায়। জমিতে ইঁদুর যাতে গর্ত করতে না পারে সে ব্যবস্থা করতে পারলে পানি চুয়ানো কমে যাবে।
সেচের কার্যকারিতা বৃদ্ধি
ফসলের প্রয়োজনের সময় সেচ দিলে সেচের পানির কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। সেচের পানির কার্যকারিতা বৃদ্ধির প্রযুক্তিসমূহ উল্লেখ করা হলো-
১। পরিমাণমতো পানি সেচ দিতে হবে।
২। সময়মতো পানি সেচ দিতে হবে।
৩। জমির চারদিকে ভালোভাবে আইল বেঁধে সেচ দিতে হবে।
৪। বিকেলে বা সন্ধ্যাবেলা পানি সেচ দিতে হবে।
৫। সারিবদ্ধ ফসলের ক্ষেতে দুই সারির মধ্যবর্তী স্থানে পানি সেচ দিতে হবে।
৬। মাটির বুনট বিবেচনা করে সেচ প্রদান করতে হবে।
৭। সেচ নালা ভালোভাবে মেরামত করে সেচ দিতে হবে
অথবা পাকা সেচ নালা তৈরি করতে হবে।
৮। উপযুক্ত পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে।
৯। সেচ নালা ফসলের দিকে ঢালু করে তৈরি করতে হবে।
১০। ইঁদুরের উৎপাত বন্ধ করতে হবে।
১১। মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব পদার্থ প্রয়োগ করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রধান সেচ প্রকল্প : কৃষকের কৃষিকাজের সুবিধার জন্য বাংলাদেশের সরকার অনেকগুলো সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পগুলো পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। যেসব এলাকায় সেচ প্রকল্প আছে সেসব এলাকার কৃষকেরা সারা বছর আউশ, আমন, বোরো, পাট, গম, আলু, শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করছেন। আবার শস্য বহুমুখীকরণ কৃষি পদ্ধতিও চালু করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-
১। গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি.কে.প্রজেক্ট)
২। বরিশাল সেচ প্রকল্প (বি.আই.পি)
৩। ভোলা সেচ প্রকল্প
৪। ঠাকুরগাঁও গভীর নলকূপ সেচ প্রকল্প
৫। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সি.আই.পি)
৬। মুহুরী সেচ প্রকল্প (এম.আই.পি)
৭। পাবনা সেচ এবং পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প (পি.আই.আর.ডি.পি)
৮। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প
৯। কর্ণফুলী সেচ প্রকল্প (কে.আই.পি)
| কাজ: তোমরা গ্রামের ফসলের মাঠ ঘুরে দেখ কীভাবে সেচের পানির অপচয় হচ্ছে। আর কৃষকেরা অপচয় রোধের জন্য কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এ বিষয়ের উপর একটি প্রতিবেদন লিখে উপস্থাপন কর। |
নতুন শব্দ: মাঠ প্রযুক্তি, বাষ্পীভবন, অনুস্রবণ
Read more